“১৯২৮-এর কংগ্রেস সম্মেলনে চট্টগ্রাম থেকে যারা বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তার মধ্যে ছিলেন―সূর্যসেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত সিংহ ইত্যাদি।”
— পূর্ণেন্দু দস্তিদার, স্বাধীনতা সংগ্রামের চট্টগ্রাম।
এই কংগ্রেস সম্মেলনে 'নেহেরু রিপোর্ট' প্রকাশিত হয় এবং লীগ ও কংগ্রেসের বিচ্ছেদে সীলমোহর পড়ে। কংগ্রেসের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী লাইনের সদস্যদের প্রিয়পাত্র ছিলেন তিনি।
১৯২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের যে লাহাের সম্মেলনে লীগ ও অন্যান্য এইরকম এলিমেন্টকে বাদ দিয়ে এককভাবে পূর্ণ স্বাধীনতা ও আইন অমান্য আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়, সে সম্মেলনেও সূর্যসেন চট্টগ্রাম থেকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি ছিলেন।
দস্তিদার লিখছেন “চট্টগ্রাম থেকে লাহাের কংগ্রেসেও প্রতিনিধি হিসেবে যান সূর্যসেন ও অম্বিকা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী। তখন জেলা কংগ্রেস সূর্যসেন দলের হাতে, তাই প্রতিনিধি দলেও তাদের পছন্দমত লােক তারা নিয়েছেন।”
পরবর্তীকালে কংগ্রেসের হিন্দুত্ববাদী নেতা এবং হিন্দু মহাসভার দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠাতা মদনমোহন মালব্যের সাথেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা বেড়ে ওঠে। মালব্যের ইচ্ছানুসারে যে নিখিল ভারত ছাত্র কনভেনশন ডাকা হয় সেই সভাতেও মাস্টারদার অনুগামীরা অংশগ্রহণ করেন।
মাস্টারদার সূর্য সেনদের বিপ্লবী তৎপরতার পুরোটাই ছিল লালা লাজপত, বালগঙ্গাধর তিলক ও বিপিন পাল প্রদর্শিত হিন্দু পুনর্জাগরণবাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। চট্টগ্রামের এই বিপ্লবীদের মন্ত্র ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের ‛বন্দেমাতরম’। বিপ্লবীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হতো― ‛বাহুতে মা তুমি শক্তি, হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি/তোমারই প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে/ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরনধারিনীম্’।
কমিউনিস্ট নেতা এবং প্রখ্যাত লেখক মুজফ্ফর আহমেদ তাঁর স্মৃতিচারণায় এই কথার সমর্থন করেছেন।
তাঁর মতে, “বাংলা দেশের সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী আন্দোলন নিঃসন্দেহে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ছিল। কিন্তু তা হিন্দু উত্থানেরও আন্দোলন ছিল। উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু রাজত্বের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।”
লেখা শেষ করবো মাস্টারদার ছাত্রী কুন্দপ্রভা সেনগুপ্তার স্মৃতিচারণ দিয়ে:
“… আমি পিছু পিছু চললাম, কিছুদূর এগিয়ে একটা মন্দিরের কাছে দু’জনেই পৌছলাম। দরজা খােলাই ছিল। মাষ্টারদা আর আমি ভেতরে ঢুকলাম। তারপর তিনি টর্চ জ্বালালেন। দেখলাম, ভীষণাননা এক কালী মূর্তি। মাষ্টারদা একহাত লম্বা একখানা ডেগার বার করে আমার হাতে দিয়ে বললেন, মায়ের সামনে বুকের রক্ত দিয়ে পূজো কর। ওখানে বেল পাতা আছে। আমি বুকের মাঝখানের চামড়া খানিকটা টেনে ধরে একটুখানি কাটার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ফোটা রক্ত বের হল। তা বেল পাতায় করে মাষ্টার দার কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি বেশ স্পষ্ট করে বললেন, ... মায়ের চরণে দিয়ে বল জীবনে বিশ্বাসঘাতকতা করব না। আমি অসংকোচে মায়ের চরণে রক্ত আর মাথা রেখে এ প্রতিজ্ঞা করলাম। …”
তথ্যসূত্র:
‛আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’; মুজাফফর আহমেদ
‛নেহেরু’; মাইকেল এডওয়ার্ডস
‛স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম’; পূর্ণেন্দু দস্তিদার
Comments
Post a Comment